আজ ৭ই জুলাই। কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী আন্দোলনের প্রবাদপ্রতিম শিক্ষক নেতা কম: কেজি বসুর ১০৪ তম জন্মদিবস। ১৯২১ সালের ৭ জুলাই কম: কেজি বসু জন্মগ্রহণ করেন। খুব অল্পবয়সে পিতৃবিয়োগ হওয়ায় সংসারের হাল ধরতে ছাত্রাবস্থাতেই বেসরকারি কোম্পানি ওরিয়েন্ট ফ্যানে অ্যাপ্রেন্টিস হিসাবে যোগদান করেন। তার মধ্যেই তিনি প্রাইভেটে পড়াশোনা করে গ্র্যাজুয়েট হন। পরবর্তী কালে ১৯৪১ সালে প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার, টেলিগ্রাফ, ক্যালকাটায় কেরানী হিসাবে যোগদান করেন। চাকরি জীবনের শুরুর দিন থেকেই কর্মচারী ইউনিয়নের একজন সক্রিয় কর্মী হিসাবে কাজ শুরু করেন।
১৯৪৬ সালে বাংলায় পি অ্যান্ড টি স্ট্রাইককে সফল করে তুলতে উল্লেখজনক ভূমিকা পালন করেন কম: কেজি বসু।এই সফলতা থেকেই নেতৃত্ববৃন্দ আলোচনা করেন এবং কর্মচারীদের মধ্য থেকেই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের যৌক্তিকতা অনুভব করেন।১৯৪৬ সালেই অল ইন্ডিয়া পোস্টাল অ্যান্ড RMS ইউনিয়ন, ইন্ডিয়ান টেলিগ্রাফ এ্যাসোসিয়েশন এবং ইন্ডিয়ান পোস্টাল ইউনিয়ন একত্রিত হয়ে ইউনিয়ন অফ পি অ্যান্ড টি ওয়ার্কার্স (UPTW) গঠনে উল্লেখজনক ভূমিকা পালন করেন কম: কেজি বসু। ১৯৪৯ সালে পি অ্যান্ড টি স্ট্রাইকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে কম: কেজি বসুকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরবর্তীতে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। আর কোনদিন চাকরিতে পুনর্বহাল হননি।কম: কেজি সর্বক্ষণের ট্রেড ইউনিয়নের কর্মী হিসাবে কাজ শুরু করেন।
১৯৫৪ সালে পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফে পৃথক পৃথক ইউনিয়নকে একত্রিত করে NFPTE গঠন করে ১৯৬০ এবং ১৯৬৮ সালে ধর্মঘটে নেতৃত্বদায়ী ভূমিকা পালন করেন কম: কেজি বসু।
কম: কেজি পোস্টাল ক্লাস থ্রি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাস থ্রি উভয় ইউনিয়নের পশ্চিমবঙ্গের সার্কেল সেক্রেটারি হিসাবে নেতৃত্ব দেন। তিনি পি-থ্রি ইউনিয়নের সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন। ১৯৭০ সালে সংশোধনবাদী নেতৃত্বকে পরাস্ত করে NFPTE র সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৪ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী, রাজ্য সরকারি কর্মচারী, রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা, শিক্ষক ইত্যাদি সংগঠনকে একত্রিত করে ১৯৬৬ সালে ১২ই জুলাই কমিটি গঠনে কম: কেজি উল্লেখজনক ভূমিকা পালন করেন এবং তিনিই প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গে কর্মচারীদের উপর যে ধরনের আক্রমন সংগঠিত হচ্ছিল তাতে তিনি যৌথ আন্দোলনের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন।
কম: কেজি বসু পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিধায়ক নির্বাচিত হন এবং বাংলার সরকারি কর্মচারীদের পে কমিশনের সদস্য হিসাব দায়িত্ব পালন করেন।
কম: কেজি ১৯৭৪ সালে ১১ ডিসেম্বর ভয়ঙ্কর ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন।তাঁর মৃত্যু পি অ্যান্ড টি তথা কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক বড় আঘাত।
আজ ১০৪ তম জন্মদিবসে তাঁর সারা জীবনের সংগ্রামী ভূমিকা, আন্দোলনে নেতৃত্ব দান এবং সংকটের সময় ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা আজকের দিনে অনির্বাণ দীপশিখা হিসাবে কর্মচারীদের হৃদয়ে থাকবেন।
কম: কে জি বসু লাল সেলাম!
কম কে জি বসু ভবনে তার প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করার মধ্যে দিয়ে এই কর্মসূচি আরম্ভ হয়। একে একে সবাই মাল্যদান করেন। তারপরে অফিস ঘরে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সভাপতিত্ব করেন কম দিলিপ দাস তিনি তার প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন। তারপর কে জি দার জীবন সম্পর্কে বলেন কম পীযুষ চক্রবর্তী, বক্তব্য রাখেন কম নাজেস নৌরজ, বক্তব্য রাখেন কম অনিমেষ মিত্র। সব শেষে বক্তব্য রাখেন কম সুজয় সরকার।