BSNL Employees Union

West Bengal Circle

COM. ANIMESH MITRA (PRESIDENT)
9433009450
COM. SUJOY SARKAR (CIRCLE SECRETARY)
9475115870
249D, B.B. Ganguly Street, Kolkata-12
E-Mail ID:-   bsnleuwb@gmail.com

*আগামী ৫’ই এপ্রিল’২৩ দিল্লিতে মজদুর-কিষাণ জমায়েতে বিএসএনএল কর্মচারী ও পেনশনাররাও উপস্থিত থাকবে কেন???
#####################
সারা দেশের মানুষ ইতিমধ্যেই জেনে গিয়েছে যে আগামী এপ্রিল মাসের ৫’তারিখ দিল্লিতে ১৪দফা দাবিতে শ্রমিক-কৃষক যৌথ আন্দোলনের কর্মসূচির ডাক এসেছে। শ্রমিক কর্মচারী ও কৃষকদের ওপর বর্তমান মোদি সরকারের লাগামহীন আক্রমণের বিরুদ্ধে ও বিভিন্ন ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যেই মূলত সিআইটিইউ এবং সারা ভারতের কৃষক সভার ডাকে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। এই কর্মসূচিতে বিএসএনএল এর নিয়মিত, অনিয়মিত ও পেনশনারদেরও যোগ দিতে হবে এমন সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেছে সর্বভারতীয় বিএসএনএল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন, বিএসএনএল ক্যাজুয়াল কন্ট্রাক্টচুয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশন এবং এআইবিডিপিএ বা এককথায় বিএসএনএল কো-অর্ডিনেশন কমিটি। এখন প্রশ্ন হোলো আমরা বিএসএনএল এর সমস্ত অংশের কর্মচারী ও পেনশনাররা কেন এই কর্মসূচিতে যুক্ত থাকবো???
ক) আমরা লক্ষ্য করেছি যে ১/১/২০১৭ থেকে বিএসএনএল এর নিয়মিত কর্মীদের তৃতীয় বেতন চুক্তি পাওনা হলেও বিএসএনএল দপ্তর লোকসানে চলছে (যদিও বিগত তিনটি আর্থিক বছরে বিএসএনএল এর Operational Profit হয়েছে) বাহানায় কর্মচারীদের বেতন চুক্তির ন্যায্য দাবিকে ক্রমাগত উপেক্ষা করে চলেছে বিএসএনএল প্রশাসন তথা দেশের সরকার।
কর্মচারীদের প্রশ্ন বিএসএনএল এর ক্ষতির জন্য দায়ী কে??? নিঃসন্দেহে বলা যায় যে মোদি সরকারের বিএসএনএল বিরোধী ও কর্পোরেট দরদী নীতির কারণেই বিএসএনএল দপ্তরের আজ এই পরিণতি!! আমরা এটাও লক্ষ্য করছি যে সারা দেশের অন্যান্য টেলি পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলি যখন 4G’সার্ভিসের পর 5G’সার্ভিস দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে তখন সরকারের নিজস্ব সংস্থা বিএসএনএলকে 5G টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি উপরন্তু 4G’ পরিষেবা চালু করার ক্ষেত্রে সরকার লাগাতার টালবাহানা করে চলেছে। সাম্প্রতিক কালে এক মিডিয়া বিবৃতিতে মন্ত্রী মহোদয় জানিয়েছেন BSNL’এ 4G’সার্ভিস চালু করতে এখনো ১৮ মাস লেগে যাবে। অথচ খুব সহজেই বিএসএনএল এর 49300টি টাওয়ারকে আপগ্রেড করে দু’বছর আগেই সারা ভারতে ফোর-জি সার্ভিস চালু করা সম্ভব ছিল এবং এই প্রক্রিয়ায় সারা দেশের মানুষ অনেক সস্তায় 4G পরিষেবা পেতে পারতো। কিন্তু মোদি সরকার সারা দেশের অন্যান্য টেলি সংস্থাগুলির 4G অথবা 5G পরিষেবার জন্য বিদেশি কোম্পানির সরঞ্জাম কেনার অনুমতি দিলেও বিএসএনএল এর এই অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
খ) বর্তমানে বিএসএনএল’এ 4G’ সার্ভিস চালু না হওয়ায় ২০২২ সালেই প্রায় ৭৭০০০ গ্রাহক আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। সরকার ২০১৯ সালে এবং ২০২২ সালে বিএসএনএল’এর পুনরুজ্জীবনের কথা ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করলেও প্রকৃত অর্থে এই দপ্তরটিকে দূর্বল করে এয়ার ইন্ডিয়ার’ মতোই ব্যক্তিমালিকের হাতে তুলে দেওয়ার সমস্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এককথায় বিএসএনএল দপ্তরকে রুগ্ন করে দেওয়ার এই সরকারের সার্বিক চক্রান্তে বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই। ‘কর্মচারীরা নয় সরকারি সিদ্ধান্তের ফলেই যে বিএসএনএল রুগ্ন’ এই সত্য নিরন্তর প্রচারের লক্ষ্যেই আমাদের সংগ্রাম।
গ) দপ্তর ক্ষতিতে চলছে’, এই বাহানায় বিএসএনএল প্রশাসন নিয়মিত কর্মীদের বেতন চুক্তি নিয়েই শুধু টালবাহানা করছে না এই দপ্তরের পেনশনারদের পেনশন রিভিশনের দাবিকেও স্বীকৃতি দিতে রাজি নয়। প্রশাসন জানিয়েছে নিয়মিত কর্মীদের বেতন চুক্তি হলেই পেনশনারদের পেনশন রিভিশন করা হবে। অথচ আমরা সকলেই জানি যে বিএসএনএল এর লাভ লোকসানের সাথে পেনশন রিভিশনের কোনো সম্পর্ক নেই কারণ পেনশন রিভিশন হলে তার দায় সম্পূর্ণভাবে সরকারের। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও সরকারের অনিচ্ছুক ভাবনার শিকার বিএসএনএল এর পেনশনভোগীরা যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
ঘ) বিএসএনএল দপ্তরে ভিআরএস প্রক্রিয়া চালু করে প্রায় ৮০০০০ কর্মীকে কর্মচ্যুত করার সাথে সাথে প্রশাসন কয়েক হাজার কন্ট্রাক্ট কর্মচারীকে SLA’র নামে ছাঁটাই করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই কন্ট্রাক্ট কর্মীরা স্বল্প বেতনে গত ২০-২৫ বছর ধরে বিএসএনএল পরিষেবা চালু রাখার কাজটি চালিয়ে এলেও বর্তমানে এদের ১২-১৬ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেরই EPF, ESIএর সমস্যা রয়েছে, সর্বোপরি কন্ট্রাক্ট কর্মীদের গ্র্যাচুইটি প্রদানের সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকলেও এখনো একজনও গ্র্যাচুইটি পায়নি। দীর্ঘদিন বেতন না পেয়ে এবং চাকুরিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন কন্ট্রাক্ট কর্মী আত্মহত্যাও করেছে। ক্যাজুয়াল কর্মীরাও ন্যায্য বেতনসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়া থেকে আজ বঞ্চিত।
ঙ) বিএসএনএল দপ্তরে Restructuring’এর নামে বর্তমান প্রশাসন কয়েক হাজার JTO, JAO, Sr. TOA, JE, TT এবং ATT পদের অবলুপ্তি ঘটিয়েছে ফলে নন এক্সিকিউটিভদের পদোন্নতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। অন্যদিকে Compassionate Ground Appointment বন্ধের নির্দেশ জারি করে মৃত কর্মীর পরিবারগুলিকে এক অবর্ণনীয় পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিয়েছে বিএসএনএল প্রশাসন ও দেশের সরকার।

*উপরোক্ত ঘটনাগুলির বিশ্লেষণে আমরা নিশ্চিতভাবেই বুঝতে পারছি যে বিএসএনএল এর নিয়মিত, ক্যাজুয়াল-কন্ট্রাক্ট কর্মচারী তথা পেনশনারদের যাবতীয় সমস্যার পেছনে দেশের সরকারের বিএসএনএল বিরোধী, PSU’ বিরোধী, শ্রমিক-কর্মচারী বিরোধী তথা কর্পোরেটদরদি মনোভাবই দায়ী।*

মোদি সরকার কেবল বিএসএনএলকে আক্রমণ করেই ক্ষান্ত নয়। এই সরকার একদিকে Natioanal Monetisation Pipeline বা NMP’র নামে প্রায় সমস্ত সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত দপ্তরের সম্পত্তি বিক্রি করার পরিকল্পনা পাকা করেছে। অন্যদিকে কর্পোরেটদের স্বার্থ রক্ষা করতে ও দেশের আর্থিক মেরুদণ্ড দূর্বল করার লক্ষ্যে LIC’র আইপিও বিক্রির সিদ্ধান্ত করেছে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলো বন্ধ করে বা একাধিক ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণ করে কর্পোরেটদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। ইতিমধ্যেই ২০১৪-১৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মোদি সরকার কর্পোরেটদের সুবিধার্থে ১০ লক্ষ ৭২ হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ মকুব করেছে, কর্পোরেট ট্যাক্সের পরিমাণ ২০১৯ সালে যেখানে ৩০% ছিল তা কমিয়ে বর্তমানে ১৫% করা হয়েছে।
দেশের জনবিরোধী সরকার কেবল এক বছরে রান্নার গ্যাসের দাম ৪৩১ টাকা বৃদ্ধি করেছে, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর খাদ্য সামগ্রীর ওপর এবারেই প্রথম ৫% জিএসটি চাপিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে এই সরকার। বর্তমানে Oxfam সংস্থার বক্তব্য অনুযায়ী বলা যায় যে আমাদের দেশের ১% বিত্তবানদের হাতে রয়েছে দেশের ৪০% সম্পদ যেখানে নিচের ৫০% মানুষের হাতে রয়েছে কেবল ৩ শতাংশ। একটি হিসাবে দেখা গেছে যে কোভিড চলাকালীন বা তার পরে যেখানে দেশের ২৩ কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নীচে চলে গিয়েছে, প্রায় ২৫ কোটি মানুষ কর্মহীন হয়েছে সেখানেই এই সময়ে দেশে বিলিওনিয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, আদানি ও আম্বানির মুনাফা কয়েক সহস্রগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে সর্বোপরি গৌতম আদানি বিশ্বে দ্বিতীয় ধনি ব্যক্তির আসন পেয়েছে।
মোদি সরকার শ্রম কোড’ চালু করে শ্রমিকের লড়াই করার অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি কায়েম করে, সাধারণ মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে ফ্যাসিস্ত কায়দায় দেশকে শাসন করার সঙ্কল্প নিয়েছে।
২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে একবছরের বেশি সময় ধরে কৃষকদের লড়াই আমরা দেখেছি। লড়াইতে ৭০০’র বেশি কৃষক শহীদের মৃত্যু বরণ করেছেন। সরকার বাধ্য হয়েছে কৃষি বিল’ প্রত্যাহার করতে। কিন্তু আজও কৃষকদের দাবি বা শ্রমিক-কর্মচারী বা আপামর জনসাধারণের ন্যায্য দাবি উপেক্ষিত। তাই শ্রমিক-কর্মচারী, কৃষক, কৃষি শ্রমিকদের যৌথ আন্দোলন আজ সময়ের চাহিদা এবং সেই কারনেই আগামী ৫’ই এপ্রিল’২৩ কিষাণ মজদুর র‍্যালীতে নিম্নোক্ত ১৪দফা দাবিতে সর্বাত্মক অংশগ্রহণ আমাদের অবশ্য কর্তব্য।
১) অবিলম্বে রাষ্ট্রায়ত্ত দপ্তর বেসরকারিকরণ বন্ধ কর, NMP’ বাতিল কর–
২) চারটি শ্রম কোড ও বিদ্যুৎ বিল-২০২২ বাতিল কর–
৩) অবিলম্বে প্রতিটি শ্রমিকের জন্য ন্যূনতম ২৬০০০টাকা বেতন, ১০০০০টাকা পেনশন চালু কর, কন্ট্রাক্টরিকরণ বাতিল কর, অগ্নিপথ স্কীম’ বাতিল কর–
৪) অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ কর, খাদ্য সামগ্রীর ওপর জিএসটি লাগু করা চলবে না, পেট্রোল/ডিজেল/কেরোসিন /রান্নার গ্যাসের ওপর এক্সাইজ ডিউটি’ প্রত্যাহার কর–
৫) অবিলম্বে কৃষিপণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য(MSP) স্থির কর এবং সংগ্রহ সুনিশ্চিত কর–
৬) আয়কর প্রদান করে না যারা সেই পরিবারগুলোর জন্য খাদ্য ও আায় সুনিশ্চিত কর–
৭) সারা দেশে ১৪টি নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সহ রেশন ব্যবস্থা চালু কর–
৮) বিত্তবান ও কর্পোরেটদের ওপর ট্যাক্সের পরিমাণ বৃদ্ধি কর, Wealth Tax চালু কর–
৯) গরীব ও মধ্যবিত্ত কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের এককালীন ঋণ মকুবের ব্যবস্থা কর, ষাটোর্ধ প্রত্যেকের জন্য পেনশন চালু কর —
১০) MGNREGA’ ব্যবস্থা প্রসারিত কর, ন্যূনতম ২০০ দিন কাজ এবং ৬০০ টাকা মজুরি ধার্য কর, বকেয়া বেতন প্রদান কর, সকলের জন্য চাকরি নিশ্চিত কর–
১১) বনাঞ্চলের আইন সুরক্ষিত কর, আইনের সংযোজন করে, বাসিন্দাদের না জানিয়ে বনসম্পদের লুন্ঠন বন্ধ কর —
১২) প্রান্তিক, গরীব মানুষের ওপর অত্যাচার বন্ধ কর, তাদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত কর–
১৩) সর্বজনীন শিক্ষা ও সকলের সুস্বাস্থ্যের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ কর, জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিল কর–
১৪) প্রত্যেকের জন্য বাসস্থান সুনিশ্চিত কর–

কমরেড পি অভিমন্যু,
সাধারণ সম্পাদক, বিএসএনএল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন

কমরেড কেজি জয়রাজ,
সাধারণ সম্পাদক, এআইবিডিপিএ

কমরেড অনিমেষ মিত্র,
সেক্রেটারি জেনারেল, বিএসএনএল ক্যাজুয়াল এন্ড কন্ট্রাক্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন।